নরক চতুর্দশী আর কার্তিক অমবস্যা 2021 পূজা বিধি, সময় আর গুরুত্ব - Narak chaturdashi 2021 in Bengali

সাল 2021 নিজের অন্তিম বা শেষ অবস্থাতে রয়েছে। শীতকাল শুরু হয়ে গেলে আর তার সাথেই পুরো দেশে পরব বা উৎসবের উল্লাসও শুরু হয়ে গিয়েছে। এই বছর মানে সাল 2021 এ পাঁচ দিন পর্যন্ত চলন্ত দীপ মহোৎসবের দ্বিতীয় দিন কার্তিক অমবস্যা আর নরক চতুর্দশী বা ভূত চতুর্দশী পরবের একটি দিনই মানানো হবে। এরকম সময়ে আজকের এই লিখন থেকে আমরা আপনাকে নরক চতুর্দশী আর কার্তিক অমবস্যার গুরুত্ব, মুহূর্ত আর পুজোর বিধির সাথে-সাথে এই লিখনের মাধ্যমে বিশেষ করে কার্তিক অমবস্যার দিন গ্রহ-দোষ নিবারণের সাথে জড়িত কিছু জরুরী উপায়ের তথ্যও দিব।

আসুন তাহলে সর্বপ্রথমে আমরা আপনাকে কার্তিক অমবস্যা আর নরক চতুর্দশীর তিথি এবং মুহুর্তের তথ্য দিই।

জীবনে চলা সমস্যা! সমাধান জানার জন্য প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন

নরক চতুর্দশী এবং কার্তিক অমবস্যা 2021 তিথি এবং মুহূর্ত

সাল 2021 এ কার্তিক অমবস্যা আর নরক চতুর্দশীর পরব এক দিনেই পড়ছে। এই সাল এই দুটি পরবই 04 নভেম্বর বৃহস্পতিবারের দিন পড়ছে।

নরক চতুর্দশী মুহূর্ত

অভঙ্গ স্নানের সময় : সকাল 06 বেজে 06 মিনিট থেকে 06 বেজে 34 মিনিট পর্যন্ত

অবধি : 0 ঘন্টা 28 মিনিট

কার্তিক অমবস্যা মুহূর্ত

অমবস্যা আরম্ভ : 04 নভেম্বর, 2021 র সকাল 06 বেজে 06 মিনিট থেকে

অমবস্যা সমাপ্ত : 05 নভেম্বর, 2021 র রাত্রি 02 বেজে 47 মিনিট পর্যন্ত

তথ্য: উপরে দেওয়া মুহূর্ত দিল্লীর জন্য বৈধ্য। এখানে ক্লিক করে আপনি আপনার শহরের অনুসারে নরক চতুর্দশী এবং কার্তিক অমাবস্যা 2021 র শুভ মুহূর্ত জানতে পারেন।

আসুন এবার আপনাকে নরক চতুর্দশী আর কার্তিক অমাবস্যার গুরুত্ব বলে দিই। সর্বপ্রথম নরক চতুর্দশীর গুরুত্ব জেনে নেওয়া যাক।

আপনার কুন্ডলীতে কী কোন দোষ আছে? জানার জন্য এক্ষণি কিনুন এস্ট্রসেজ বৃহৎ কুন্ডলী

নরক চতুর্দশীর গুরুত্ব

নরক চতুর্দশীকে সনাতন ধর্মে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতি বছর কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী সনাতন ধর্মে নরক চতুর্দশী হিসেবে পালিত হয়। এই উৎসবটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রূপ চৌদাস, নরক চৌদাস এবং রূপ চতুর্দশীর মতো বিভিন্ন নামেও পরিচিত। দীপাবলির ঠিক আগে পালিত হওয়ার কারণে অনেক জায়গায় একে ছোট দীপাবলিও বলা হয়।

নরক চতুর্দশীর গুরুত্ব নানাভাবে বিশেষ। এই দিনে মৃত্যুর দেবতা যমের পূজা করা হয়। বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে সূর্য্যদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠে সারা শরীরে তিলের তেল মেখে স্নানের জলে তুলসী পাতা দিয়ে স্নান করলে নরকের ভয় থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তার সাথেই রূপেও উজ্জ্বলতা আসে। নরক চতুর্দশীর উৎসবের সাথে জড়িত একটি রহস্যও রয়েছে যা রাজা বলি আর ভগবান বিষ্ণু কে ছাড়াও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথেও জড়িত রয়েছে। আসুন এবার আপনাকে সেই রহস্যের ব্যাপারে তথ্য দিই।

নরক চতুর্দশীর রহস্য

নরক চতুর্দশী মানানোর পিছনে আমরা সাধারণত দুটি গল্প/রহস্য শুনতে পাই। এই গল্পগুলির একটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথে জড়িত এবং অন্য গল্পটি ভগবান বিষ্ণুর অবতার বামনের সাথে জড়িত। আসুন এবার আপনাকে সেই দুটি গল্প/রহস্যের ব্যাপারে বলি।

প্রথম গল্প/রহস্য যা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথে জড়িত, সেই গল্প/রহস্যের অনুসারে নরকাসুর নামক দৈত্য কঠিন তপস্যা করে দেবতাদের থেকে এই বরদান প্রাপ্ত করে নেন যে উনার মৃত্যু শুধুমাত্র কোন স্ত্রীর হাতেই হবে। এই বরদান প্রাপ্ত করে নরকাসুর তিন লোকেই অত্যাচার করতে লাগেন যা দেখে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার অর্ধাঙ্গিনী সত্যধামার সাথে মাইল কার্তিক মাসের চতুর্দশী তিথি তে নরকাসুরের বধ করেন। নরকাসুরের মৃত্যুর পরে লোকেরা নিজের-নিজের ঘরে প্রদ্বীপ জ্বালান আর সেইথেকে নরক চতুর্দশীর পরব মানানো শুরু হয়ে থাকে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে ভগবান কৃষ্ণ 16 হাজার নারীকে নরকাসুরের বন্দিদশা থেকে মুক্তি করেছিলেন, যারা পরে উনার স্ত্রী হন।

অন্যদিকে দ্বিতীয় গল্প/রহস্য অনুসারে যখন ভগবান বিষ্ণুর অবতার বামন কে নিয়ে বলির সমস্ত রাজপাট নিয়ে জমিন আর আকাশকেও দুই ধাপে পরিমাপ করা হয়েছিল, তারপর ভগবান বামন রাজা বলিকে জিজ্ঞাসা করলেন যে তিনি এখন তৃতীয় পদক্ষেপটি কোথায় নেবেন। এই প্রশ্নের উত্তরে রাজা বলি ভগবান বামন কে তার তৃতীয় পদক্ষেপ তার মাথাতে রাখতে বললেন। রাজা বলির এই ভক্তি ভাব দেখে ভগবান বিষ্ণু অতি প্রসন্ন হন আর উনি তাকে উনার কাছ থেকে বরদান চাইতে বললেন। তখন রাজা বলি বরদান চেয়ে ভগবান বামন কে বললেন যে প্রত্যেক বছর ত্রয়োদশী তিথি থেকে নিয়ে অমবস্যার দিন পর্যন্ত পৃথিবীতে উনারই যেন (রাজা বলি) রাজত্ব হয় আর এই সময় যারা রাজা বলির রাজ্যে দীপাবলী মানাবেন আর তার সাথেই চতুর্দশীর তিথি তে দীপদান করবে, এরকম সব জাতকদের আর তার পূর্বপুরুষদের জাহান্নামের আযাব ভোগ করতে হবে না। ভগবান বামন রাজা বলির এই কথা মেনে নেন এবং তারপর থেকে নরক চতুর্দশীর উৎসব সর্বত্র পালিত হতে থাকে।

আসুন এবার আপনাকে নরক চতুর্দশীর পুজোর বিধির তথ্য দিই।

নরক চতুর্দশীর পুজো বিধি

• নরক চতুর্দশীর দিন সূর্য্যদয়ের আগে উঠুন।
• এরপরে তিলের তেল পুরো শরীরে লাগান আর তারপরে তুলসী পাতা মাথার উপরে তিনবার ঘুরিয়ে স্নানের জলে ফেলে দিন।
• নরক চতুর্দশীর পূর্বের অষ্টমী অর্থাৎ কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী অহোই অষ্টমী হিসেবে পালিত হয়। অহোই অষ্টমীর দিন একটি পাত্রে জল ভরে নিরাপদে রাখুন। নরক চতুর্দশীর দিন এই পাত্রের জলও স্নানের জলে মেশানো হয়।
• এই দিনে স্নান করার পর মৃত্যুর দেবতার দিকে অর্থাৎ দক্ষিণ দিকে হাত জোড় করে যমকে স্মরণ করে আপনার জ্ঞাতসারে বা অজান্তে করা পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। এটি ভগবান যমকে খুশি করে এবং আপনার সমস্ত পাপের হিসাব ক্ষমা করে দেয়।
• এরপরে যম দেবতার জন্য দক্ষিণ দিশাতে তেলের প্রদ্বীপ ঘরের মূখ্য দরজার বাইরে রাখুন।
• এর পরে, এই দিন সন্ধ্যায় অন্যান্য সমস্ত দেব-দেবীর বিধি-অনুযায়ী পূজা করুন এবং ঘর, অফিস, দোকান ইত্যাদির বাইরে তেলের প্রদ্বীপ জ্বালিয়ে রাখুন। এতে মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ আপনার উপর পড়বে।
• এই দিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণর পুজো করারও বিধান রয়েছে। বিশ্বাস অনুসারে এই ভক্তদের রূপবান হওয়ার আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়ে থাকে।
• এদিন মধ্যরাতে বাড়িতে পড়ে থাকা পুরনো ও নষ্ট জিনিসপত্র ঘর থেকে ফেলে দেওয়া হয়, যাকে বলা হয় 'দরিদ্রায় নিসরণ'। বিশ্বাস অনুসারে, নরক চতুর্দশীর পরের দিন মাতা লক্ষ্মী সকলের ঘরে প্রবেশ করেন এবং তিনি এমন বাড়িতে থাকেন না যেখানে প্রচুর ময়লা থাকে।

আসুন এবার এই দিনে থাকা কার্তিক অমবস্যার গুরুত্ব আর এটি পুজোর বিধির তথ্য আপনাকে দিই।

ক্যারিয়ারকে নিয়ে চিন্তিত! এক্ষণি অর্ডার করুন কগ্নিএস্ট্র রিপোর্ট

কার্তিক অমবস্যার গুরুত্ব

যদিও সনাতন ধর্মে প্রতিটি অমাবস্যাকে খুব বিশেষ বলে ধরা হয়, কিন্তু কার্তিক অমাবস্যার গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ কার্তিক অমাবস্যার দিনে সারা দেশে পালিত হয় দীপাবলীর উৎসব। এই দিনটির গুরুত্বও বেড়ে যায় কারণ স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই দিনটিকে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় দিন হিসাবে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন যে এই দিনে যে তাঁর পূজা করবে, তার সমস্ত গ্রহ দোষ ও জীবনের অসুবিধা বিনষ্ট হবে। মা লক্ষ্মী এই দিনে পৃথিবীতে আসেন, এই দিনে গীতা পাঠের পাশাপাশি দান পুণ্য করার ফলে বিশেষ ফল পাওয়া যায় এবং প্রদীপ দান করলে ফল অক্ষয় হয়ে থাকে। এছাড়াও, বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে পূর্বপুরুষদের জন্য করা দান ও পূজার ফলও নবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত হয়, অর্থাৎ জন্মের পর জন্ম পর্যন্ত এর ফল আপনি প্রাপ্ত করবেন।

আসুন এবার আপনাকে কার্তিক অমবস্যার পুজোর বিধির তথ্য দিই।

কার্তিক অমবস্যা পূজা বিধি

• কার্তিক অমবস্যার দিন সকালে শীঘ্র উঠুন।
• কাছাকাছি অবস্থিত কোন পবিত্র নদী বা পুকুরে স্নান করুন। যদি করোনার সময় এটি করা আপনার পক্ষে সম্ভব না হয় তবে স্নানের জলে সামান্য গঙ্গাজল মিশিয়ে স্নান করুন।
• এরপর তামার পাত্রে লাল চন্দন ও লাল ফুলের সঙ্গে অক্ষত মিশিয়ে ভগবান সূর্যকে অর্ঘ্য অর্পিত করুন।
• এরপর প্রবাহিত জলে তিল ভাসিয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু এই সময় যদি তা করা সম্ভব না হয়, তাহলে তিল আলাদা করে একটি পরিষ্কার কাপড়ে বেঁধে নিরাপদ স্থানে রাখুন। পরে যখনই সুযোগ পাবেন এই তিল নদীতে ভাসিয়ে দিন।

গ্রহ দোষ নিবারণের জন্য কার্তিক অমবস্যার দিন করুন এই কাজ

• এই দিনে গ্রহের দোষ নিবারণের জন্য নবগ্রহ স্তোত্র পাঠ করুন। এটি নবগ্রহদের শান্ত করে এবং আপনাকে শুভ ফল দেয়।
• যদি আপনার কুণ্ডলীতে কোনো ধরনের অশুভ যোগ তৈরি হয়, যা আপনার জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তাহলে এই দিনে আপনাকে অবশ্যই বিষ্ণু সহস্রনাম পাঠ করতে হবে। এই কাজ সেই যোগের প্রভাব কমিয়ে দেয়।
• বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্রে শনিদেবকে ন্যায়ের দেবতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এমন অবস্থায় যদি শনি আপনার কুণ্ডলীতে ভুল স্থানে অবস্থান করে আপনাকে খারাপ ফল দেয়, তাহলে কার্তিক অমাবস্যার দিনে মন্দিরে বা গরীবের ব্যাক্তির বাড়িতে গিয়ে প্রদীপ জ্বালানো উচিত। এর ফলে ভগবান শনি প্রসন্ন হন এবং তার নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস পায়।
• যদি আপনি সমাজে আশানুসারে যশ প্রাপ্ত হচ্ছে না তাহলে কার্তিক অমবস্যার দিন ভগবান শিবকে মধু দিয়ে অভিষেক করুন। এরফলে আপনার বাণীতে ভদ্রতা আসবে এবং আপনার জীবনে সুখ, শান্তি ও খ্যাতি বৃদ্ধি পাবে।

সমস্ত জ্যোতিষীয় সমাধানের জন্য ক্লিক করুন: এস্ট্রসেজ অনলাইন শপিং

আমরা আশা করি যে আপনার অবশ্যই আমাদের এই নিবন্ধটি পছন্দ হয়েছে। যদি পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে, আপনি অবশ্যই এই নিবন্ধটি আপনার অন্যান্য শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ!